পন্ডিত অনিমেষ শাস্ত্রী
আজ বাইশে শ্রাবন|এই দিনটায় প্রতি বছরই আমি কিছু লিখি,অবশ্যই গুরুদেবকে নিয়ে এবং তার সৃষ্টি কে নিয়েই বলি, মানে ওই গঙ্গাজলে গঙ্গা পুজো আরকি!
কবি গুরুকে নিয়ে ভাবতে বসলে প্রথমেই যে প্রশ্ন গুলো মনের কোনে উঁকি দেয় তা হোলো – আসলে তিনি কে? কি তার স্বরূপ?আমি মনে করি তিনি একজন প্রকৃত সাধক যার সাধনার বিষয় কিন্তু আসলে তিনি কে? কি তার স্বরূপ?আমি মনে করি তিনি একজন প্রকৃত সাধক যার সাধনার বিষয় বস্তু পাল্টেছে কিন্তু একাগ্রতা বা নিষ্ঠায় খামতি হয়নি এতটুকুও| পাল্টেছে কিন্তু একাগ্রতা বা নিষ্ঠায় খামতি হয়নি এতটুকুও|
তার চরিত্রের যে দিকটা সব থেকে আমাকে বেশি টানে তা হোলো তার এক্সপেরিমেন্ট করে যাওয়ার সহজাত ক্ষমতা ও প্রতিভা|হ্যাঁ, এক্সপেরিমেন্ট সারাটা জীবন তিনি তাই করে গেছেন আর বলা বাহুল্য সাফল্য বার বার ধরা দিয়েছে তার কাছে, তিনি আমাদের প্রানের ঠাকুর রবিঠাকুর|
শিক্ষা ক্ষেত্রকে চার দেয়ালের বাইরে এনেছেন শান্তিনিকেতন গড়ে|বাংলা ভাষা তার হাতে হয়েছে সাবলম্বী|সাহিত্য, সংগীত,অঙ্কন কেউ বাদ যায়নি তার এই পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে|রাজনীতি থেকে বিজ্ঞান, রান্না থেকে প্রেতচর্চা সব কিছুকে তিনি ছুঁয়ে গেছেন নিজের মতো করে|জ্যোতিষ শাস্ত্রেও তার অগাধ আস্থা ও কৌতূহল ছিলো যার প্রমান পাওয়া যায় চিঠিতে, লেখাতে এবং ছবিতে|
আর এই উদারতা এবং সৃষ্টিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে কারন মনের দরজা জানলা তিনি বন্ধ করেননি কোনো দিনও,বয়স তার কাছে একটা সংখ্যা মাত্র তাই তিনি প্রেমেও পড়েছেন বার বার|সেই প্রেমে কোনো হারজিত নেই আছে সৃষ্টির আনন্দ|
ধর্ম বা ঈশ্বরনিয়ে তার চিন্তা বার বার ধরা দিয়েছে তার পূজা পর্যায়ের গানগুলিতে|তিনি পরম পিতায় আস্থা রেখেছেন সারাজীবন আর শিখিয়েছেন কিভাবে আস্থা রাখতে হয়, কিভাবে ব্যক্তিগত ক্ষতি, পরাজয়কে ছাপিয়ে গিয়ে সৃষ্টি সুখের আনন্দে মেতে থাকতে হয় তা তিনি দেখিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে|তার এই গুণাবলীর এক কোনাও যদি জীবনে আয়ত্ত করা যায় তাহলে জীবন ধন্য|
সত্যি কথা বলতে কি রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আমার একটা দিনও চলেনা|অবসর হোক বা অসুস্থতা, আনন্দ হোক বা বিষণ্নতা, এমনি থেকেই হাত চলে যায় বইয়ের আলমারিরা এক কোনে সযত্নে গুঁজে রাখা রবীন্দ্র রচনাবলীর দিকে|পাতা ওল্টালেই সব মন খারাপ ভ্যানিশ|আজ তার প্রয়ান দিবস, হ্যাঁ তিনি রবীন্দ্রনাথ, তিনি বিশ্ব কবি তবে বাঙালির কাছে তিনি ঠাকুর,যার পুজো করি আমরা বছরের এই দুটো দিন অর্থাৎ 25 এ বৈশাখ ও 22 এ শ্রাবন
আজ এই বিশেষ দিনে, এই মহামানবকে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি, শত কোটি প্রনাম তার চরনে|