Friday, November 22, 2024
Home Blog কোহিনুরের কথা

কোহিনুরের কথা

রোজনামচা সম্পাদকীয়

হীরা !! ডায়মন্ড !! এ যেন এক রহস্য  এক আকর্ষণ| পৃথিবীর মহা মূল্যবান রত্ন গুলোর মধ্যে অন্যতম হীরে । আমরা অনেকেই ব্লাড ডায়মন্ড মুভিটা দেখেছি। এই একটা বস্তু পুরো আফ্রিকাকে, আফ্রিকার মানুষের অবর্ননীয় কষ্টের কারন তা নিয়ে গোটা ছবি । মেয়েদের খুশি করানোর জন্য এর চেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র আর নেই |আর সে হিরে যদি হয় কোহি নূর ! তাহলে তো কথাই নেই কারন বিশ্বের সব থেকে মূলবান হীরে হলো কোহিনুর | আজকে বলবো দুনিয়ার সবচেয়ে দামী হীরার কথা, হ্যাঁ কোহিনুর  বা “Mountain of Light” বা “আলোক পর্বত “|

কোহিনুরের ওজন- 105.6, ক্যারেট- 21.6 গ্রাম,রঙ- বর্ণহীন, শ্বেত শুভ্রমূল | হিরে টি পাওয়াযায় ভারত এর কোল্লুর খনি যা  গুন্টুর জেলা, অন্ধ্রপ্রদেশ, এ অবস্থিত |আবিষ্কারের  সময় আনুমানিক ত্রয়োদশ শতাব্দী  |মূল মালিকানা ছিলো কাকাতিয়া রাজবংশের|কোহিনুরের   বর্তমান মালিক ব্রিটিশ রাজ পরিবার| 

এই হীরার ইতিহাস অতি দীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য। এর ইতিহাসের সূচনা ১৩০৪ সালে। প্রাচীনকালের সুন্দরী কুমারীর মতো এটিও বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে এখন স্থান পেয়েছে ব্রিটিশ রাজ পরিবারে । ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনূর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল এবং পরবর্তীকালে তা মোগল সম্রাটদের হাতে আসে এবং সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ুর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করে। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে, লুঠ করে কোহিনুর, নিয়ে যায় আফগানিস্তান এ । কিন্তু রাখতে পারেননি । পরবর্তী কালে তার হাত থেকে কোহিনুর যায়  ইরানে। কোহিনূর নামটিও নাদির শাহের দেয়া বলে অনেকে মনে করেন । নাদির শাহ নিহত হবার পর কোহিনূর আসে আফগানিস্তান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্রের কাছে। আফগানিস্তান থেকে মহারাজা রণজিত্‍ সিং সেটি গ্রহণ করেন এবং শেষ পর্যন্ত রণজিত্‍ সিংএর পুত্র দিলীপ সিংহ  সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ সালে তুলে দেন রাণী ভিক্টোরিয়ার হাতে| যদিও এই উপহার দেওয়া নিয়ে বিতর্ক আছে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন রাজা রঞ্জিত সিংহ কোহিনুর তুলে দিতে চেয়েছিলেন পুরীর মন্দিরে কিন্তু তার শারীরিক অসুস্থতা ও মৃত্যুর পর ব্রিটিশ কোম্পানি চাপ সৃষ্টি করে তার নাবালক পুত্রের থেকে কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে ছিলো কোহিনুর |

নতুন করে কাটিং করিয়ে ১০৮.৯৩ ক্যারট ওজনবিশিষ্ট কোহিনূর প্রথমে রাণী ভিক্টোরিয়া ব্যবহার করতেন তার হাতে। এরপর সেটি স্থান পায় বৃটিশ মুকূটে। বলা হয়, এই প্রিসিয়াস হীরা টি অভিশপ্ত, যে রাজাই এই হীরাটি পেয়েছে সে ই তার রাজ্য হারিয়েছে। তবে যে সব রাজা এটি তার রানীদের দিয়েছেন তারা বেচে গেছে |উপমহাদেশের এক সময়ের অহংকার এখন বৃটেনে। কোহিনূরের মালিকানা নিয়ে আশির দশকেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত এর সত্ত্ব দাবি করেছিল কারন সেই সময় ভারত, বাংলা দেশ ও পাকিস্তান ছিলো একটাই দেশ তাছাড়া বাকি দেশ গুলোতে পর্যায় ক্রমে কিছু সময় ছিলো এই মহা মূল্যবান হিরে  তবে বৃটিশ সরকার সব দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসকল দাবী অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে। এর সঠিক  মুল্য নির্ধারন করা আজও  সম্ভব হয় নি।এক কোথায় অমূল্য এই হীরা |

জোতিষ শাস্ত্র মতে হীরে শুক্র গ্রহের পাথর | সঠিক রত্ন নির্বাচন যেমন জাতকের জীবনে শুভ পরিবর্তন নিয়ে আসে তেমনি ভুল রত্ন ধারন ক্ষতি করে | সেদিক দিয়ে কোহিনুর ব্যতিক্রম নয় | কোহিনুর পেয়ে অনেকের যেমন ভাগ্য খুলে গেছে অনেকে আবার হারিয়েছে অনেক কিছু |তবে কি কোহিনুর হাতে আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পেছনে আছে জোতিষ শাস্ত্র ! এও এক রহস্য |

বিতর্ক যাই থাক কোহিনুরে সব থেকে বেশি অধিকার ভারতের কারন এই ভারতের মাটিতেই আবিষ্কার হয়েছিল হীরেটা | এটা প্রমাণিত সত্য | সম্প্রতি দেশের সংসদেও দাবি ওঠে কোহিনুর ফিরিয়ে আনার | ভারত সরকারও দাবী করে আসছে যে দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে তারা যথা সাধ্য করছে | আইনি লড়াইয়ের কোথাও বলা হচ্ছে বহু কাল ধরে |সম্প্রতি সেই আইনি লড়াই নিয়ে বেশ আলোচনাও হচ্ছে।দেখা যাক কি হয়।
আমি কিন্তু আশাবাদী।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments