Saturday, July 27, 2024
Home Blog বিশ্বকে ভারতের অমূল্য উপহার জ্যোতিষ শাস্ত্র

বিশ্বকে ভারতের অমূল্য উপহার জ্যোতিষ শাস্ত্র

পন্ডিত অনিমেষে শাস্ত্রী

ভারতের চন্দ্র বিজয় যখন সারা বিশ্বে হৈচৈ সৃষ্টি করেছে। জ্যোতিষ শাস্ত্রের জন্য ও এটি গর্বের বিষয় কারন মহাকাশ বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র পরস্পরের থেকে আলাদা কিছু নয়। তারা একে অন্যের পরিপূরক বলাযায়। তাই আগে বলা কিছু কথা আজ আরো একবার রিপিট করতে হচ্ছে।

একজন সফল জ্যোতিষী হিসেবে লোকে আমায় কিছুটা হলেও জানে ও মানে | একটা কথা বলতেই হয় জ্যোতিষ নিয়ে যখনই কিছু বলতে বা লিখতে বসি গর্বে আমার বুকটা ফুলে যায় কারণ আমার দেশের আমার ভারতবর্ষের জ্যোতিষ চর্চা বা  জ্যোতিষশাস্ত্র পৃথিবীর মধ্যে প্রাচীনতম | হ্যাঁ শুনতে  অবাক লাগে ভারতীয় জ্যোতিষ চর্চা প্রায় 5000 বছর ধরে চলে আসছে| পাশ্চাত্যে এবং পরবর্তীকালে চীন দেশে জ্যোতিষ চর্চা হয়েছে তার বয়স কিছু কম নয় কিন্তু আমি জোর গলায় বলতে পারি ভারতীয় জ্যোতিষ চর্চা প্রাচীনত্বে এবং কার্যকারিতার দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ| শুধু তাই নয় পদ্ধতিগত দিক থেকেও ভারতের জ্যোতিষ চর্চা অনেক আলাদা ও বিজ্ঞানসম্মত | ভারতীয় জ্যোতিষ  শাস্ত্র কেন সবথেকে প্রাচীন কেন সব থেকে আলাদা এবং উন্নত সে নিয়েও  আলোচনা করা যেতে পারে|

পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ গুলির মধ্যে অন্যতম বেদ | এই বেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আজ আর কারোর মধ্যে খুব একটা সংশয় নেই |আর ওই বেদেই  ভারতের জ্যোতিষ শাস্ত্রের উৎস লুকিয়ে আছে| বেদের ছটি সম্পূরক অংশ বা পরিশিষ্ট আছে যাকে বেদাঙ্গ বলেও আমরা জানি এই বেদাঙ্গ গুলোর মধ্যে অন্যতম জোতিষ বেদাঙ্গ যা মূলত ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তর|

ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অ্যাস্ট্রোলজি বিজ্ঞানসম্মত অ্যাস্ট্রোনমি এর উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে তাই আমাদের জ্যোতিষ শাস্ত্র সবথেকে বেশি বিজ্ঞানসম্মত বা বিজ্ঞানমনস্ক | ভারতের জ্যোতিষশাস্ত্র সূর্যসিদ্ধান্ত মতে সিদ্ধান্ত নেয় আবার বিজ্ঞান ও বলছে এই সূর্যই হচ্ছে প্রাণের উৎসব সূর্যকে কেন্দ্র করেই প্রাণ আবর্তিত হয়, শুধু তাই নয় গোটা ইউনিভার্স কে 360 ডিগ্রি তে ভেঙে নেওয়া এটাও কিন্তু যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক দক্ষতার পরিচয় দেয়| এমনকি এইযে আমি বারবার কালার থেরাপির কথা বলি কালার থেরাপি ও কতটা বিজ্ঞান  সম্মত আমাদের জ্যোতিষশাস্ত্র সেই প্রাচীনকাল থেকে আমাদের শিখিয়ে আসছে| মঙ্গল নামক গ্রহ টার রং যে লাল তা বিজ্ঞান অনেক পরে বলেছে সবার আগে বলেছিল ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র তাই মঙ্গলের পাথর বলতে আমরা রক্ত প্রবাল বা লাল পলা কে জানি| নটা গ্রহ এবং তাদের অবস্থান জ্যোতিষ শাস্ত্র বহু আগেই স্পষ্ট করেছে| ভাবতেও অবাক লাগে 4 – 5 হাজার বছর আগে ভারতীয় জোতিষী রা কোনো আধুনিক উপকরণ ছাড়া শুধু অংক কষে  কিভাবে এতো সঠিক বিজ্ঞান সম্মত জ্ঞান লাভ করে ছিলো।

গোলা, গণিত,  প্রশ্ন, জাতক, মুহূর্ত এবং নিমিত্ত এই ছটি হলো ভারতীয় জোতিষ শাস্ত্রের প্রধান ছটি শাখা যা সৃষ্টি হয়েছে কয়েক হাজার বছরের গবেষণা লব্ধ ফলাফল ও পর্যবেক্ষ  এর উপর ভিত্তি করে | বশিস্ঠ,ভৃগু, গর্গ প্রমুখ জ্যোতিষ রা বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রম করে এক অসাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার তৈরী করে রেখে গেছে আগামী প্রজন্মের জন্য | তাদের সহায়ক হয়ে ছিলো আর্যভট্ট ও বরাহ মিহির এর মত বিশ্ব বিখ্যাত গণিত বিশারদ দের গবেষণা এবং জটিল ক্যালকুলেশন|

আমার কাছে আর্যভট্ট শুধু ফাদার অফ এস্ট্রোনমি নন প্রকৃত পক্ষে তিনি ফাদার অফ ancient Indian astrology | গ্রহ নক্ষত্র সম্পর্কে তার নিখুঁত পর্যবেক্ষণ ছাড়া ভারতীয় জোতিষ এতো দুর এগোতে পারতো না | কিন্তু দুঃখের বিষয় বার বার বৈদেশিক আক্রমনের ফলে তাদের বহু পুঁথি ধ্বংস হয়েছে, লুঠ হয়েছে | পরাশর ঋষি দ্বারা রচিত পরাশর হোরা শাস্ত্র খুব সামান্য ই উদ্ধার করা গেছে | আশ্চর্য এর বিষয় এতো কিছুর পর ও যেটুকু অবশিষ্ট তা নিয়েই আমরা অনেকের থেকে এগিয়ে | এর এক টা কারন হলো জোতিষ বিদ্যা মূলত গুরু মুখী বিদ্যা গুরু শিষ্য পরম্পরা কে ভিত্তি করে এই বিদ্যা প্রবাহিত হচ্ছে একটা জেনারেশন থেকে আরেকটা জেনারেশন এ | ঠিক যেমন পরাশর তার প্ৰিয় ছাত্র মৈত্রেয় কে দিয়ে গেছিলেন নিজের বিদ্যা |

সব শেষে বলতে হয় যদি গোটা পৃথিবী টাকে একটা বৃহৎ পাঠশালা হিসেবে দেখি অন্তত জ্যোতিষ বিদ্যার ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ সেই পাঠশালার প্রধান শিক্ষক | ভারত থেকেই জোতিষ বিদ্যা ছড়িয়ে পড়ে ছিলো সুদূর ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, ইরান, গ্রিক সভ্যতা এবং  মিশরীয় সভ্যতায়।

চন্দ্র অভিযানে। থেমে থাকবেনা এই বিজয় রথ আরো অনেক গ্রহ নক্ষত্র ধরা দেবে আমাদের কাছে। আরো নতুন নতুন তথ্য আসবে। প্রতিবার সমৃদ্ধ হবে জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিষ শাস্ত্র।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments